বিশেষ সংবাদদাতা,(খবর7দিন প্লাস):- সাংবাদিক-লেখক দিব্যেন্দু ঘোষের দ্বিতীয় বই প্রকাশ। গরমের দুপুরে কলকাতায় মোড়ক উন্মোচন হলেও পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে শীতলতার স্বাদ পেয়েছেন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি, বন্ধু, প্রিয়জনেরা। শনিবার দুপুরে নলিনী গুহ সভাঘরে এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হল দিব্যেন্দুর ভ্রমণ গল্পের সংকলন ‘আবার আসিব ফিরে’। মনোরম ভ্রমণ গল্প, প্রকৃতি, নারী, ও প্রেম লেপ্টে রয়েছে দুই মলাটের ভিতরে প্রতি পাতায়। মোড়ক উন্মোচন করলেন বিশিষ্ট নাট্যকার, নাট্য নির্দেশক ও অভিনেতা চন্দন সেন। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক নলিনী বেরা, বিশিষ্ট চিকিৎসক ড. অরিন্দম বিশ্বাস, বিশিষ্ট ফুটবলার দেবকুমার শাসমল, তৃণমূল নেত্রী সুজাতা মণ্ডল, বিশিষ্ট সাংবাদিক দেবাশিস দাশগুপ্ত, বিশিষ্ট কবি রিনা গিরি, অরূপ পান্তি, সর্ণালী মণ্ডল, বিশিষ্ট সাংবাদিক, কবি, গদ্যকার অনীশ ঘোষ, প্রফেসর সৌম্য দত্ত, অভীক কুমার বসু, আইনজীবী অনন্যা বারিক। রবীন্দ্র সঙ্গীত, মাউথ অর্গান, কবিতা পাঠ, আবৃ্ত্তিতে অনুষ্ঠান জমিয়ে দেন বৈশাখী কর, ড. বিজয় পাল, অনীশ ঘোষ, রিনা গিরি, অরূপ পান্তি, সর্ণালী মণ্ডল, পিয়ালি চক্রবর্তী, নন্দিতা গোস্বামী, কাকলি দত্ত পাল, স্মৃতি বিশ্বাস, মিঠু ঘোষ, অনন্যা বারিক। ‘আবার আসিব ফিরে’-র নির্মাণের নেপথ্য কাহিনি তুলে ধরেন প্রকাশক ধীমান পাল, বিশিষ্ট গদ্যকার কল্যাণ কুমার কুণ্ডু।
যে লেখায় ফিরে আসার কথা বলে দিব্যেন্দু বোধহয় নিজেই প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গেছে। ওর হারিয়ে যেতে নেই মানা। জীবনের এই দর্শনকে আঁকড়ে ধরেই টিকে আছেন তিনি। আর তাই বোধহয় ‘আবার আসিব ফিরে’ এই কথা বলেই কেমন হারিয়ে গেছেন লেখক। তবুও সব হারানো বোধহয় হারানো নয়। সেই ছোট থেকেই তাঁর পায়ের তলায় সর্ষে। যখন লিখতে ইচ্ছে হল, স্মৃতি হাতড়ে তেমন কিছু এল না। তাই কৈশোর, যৌবন পেরিয়ে ছুটে বেড়ানো। সে সব নিয়েই গল্পের মতো ভ্রমণ। ঠিক চিরাচরিত ভ্রমণ কাহিনি নয়, আবার ভ্রমণ কাহিনিও বটে। কেউ বলতেই পারেন উঠল বাই, কেউ বলতে পারেন বাজল ছুটির ঘণ্টা, কেউ বলতে পারেন গল্পের ছলে ভ্রমণ। কখন যাবেন, কোথায় থাকবেন, কী দেখবেন-এর থেকেও বেশি মানুষের গল্প, প্রকৃতির গল্প, প্রেমের গল্প। প্রকৃতি, নারী, প্রেম কখন যেন আচ্ছন্ন করে ফেলে ভ্রমণের এই লেখাগুলিকে। যা দেখেছেন, শুনেছেন, অনুভূতিকে সমৃদ্ধ করেছে, যা শিখেছেন, যা তাঁর নিত্য যাপনকে প্রাভাবিত করেছে তারই আঁখো দেখা হাল। লোকের মুখে শোনা নয় বা নেট ঘেঁটে তথ্য সংগ্রহ নয়, এ লেখা প্রকৃত অর্থেই জীবন্ত, দৃষ্টির বিশ্বাস থেকে তুলে আনা নির্ভীক দলিল। কোথায় যাবেন, কখন যাবেন, কোথায় থাকবেন, কত খরচ, ভ্রমণার্থীদের জন্য এ সব তথ্যসমৃদ্ধ লেখা বাংলা ভাষায় বহু। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা হোক বা বই, তার সংখ্যাও প্রচুর। ভ্রমণ কাহিনির প্রাথমিক শর্ত এগুলোই। মানে, ভ্রমণের একটি লেখা পড়ে পাঠক সেখানে যেতে চাইবে, বাড়িতে বসেই তার চোখের সামনে সেই জায়গাটা ভাসবে, নিজেকে ঠিক সেখানটায় নিয়ে গিয়ে ফেলতে অসুবিধে হবে না। এটাই ভ্রমণ কাহিনির মৌলিক শর্ত। এই শর্ত মাথায় রেখেই আবার আসিব ফিরে। অবহেলিত ভ্রমণ সাহিত্যের ঠোঁটে একফোঁটা প্রাণ-জল। প্রতিটি লেখাই নিজের মতো করে মৌলিক, পাঠক পড়তে শুরু করলেই সেই মৌলিকত্বের সঙ্গে পরিচিত হবেন সহজেই। শুধু ভ্রমণপিপাসু নয়, বাংলা সাহিত্যের একনিষ্ঠ পাঠক এ বই হাতে তুলে নেবেন সাহিত্যের রসাস্বাদনের জন্য। মোদ্দা কথা, ভ্রমণের একটা বই বিভিন্ন ধারার পাঠকের মনোরঞ্জন করবে, পাঠককে ছুটিয়ে নিয়ে যাবে, মনের মধ্যে ঘুরে বেড়ানোর ভালবাসা জাগিয়ে তুলবে। কোনও এক পাঠক এ বই পড়লে, তার প্রিয়জনদের পড়তে বলবেন, এবং যাদের পায়ের তলায় সর্ষে, তারা রুকস্যাকে যত্ন করে রাখবেন, কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগে এ বই নিতে ভুলবেন না।