নিজস্ব সংবাদদাতা,কাঁকসা(খবর7দিন প্লাস):-পশ্চিম বর্ধমান ও বীরভূম জেলার প্রাকৃতিক সীমারেখা হিসেবে বয়ে চলেছে অজয় নদ। এই নদীর এক পাড়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসা ব্লকের বিদবিহার অঞ্চলের শিবপুর এবং অপর পাড়ে বীরভূম জেলার জয়দেব। প্রতিবছর মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে বীরভূমের জয়দেব কেন্দুলীতে বসে ঐতিহ্যবাহী মেলা, যেখানে পশ্চিম বর্ধমান-সহ বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থী ভিড় জমান।
দীর্ঘদিন ধরে এই দুই জেলার মানুষ অজয় নদ পারাপারের জন্য বালি ও মাটি দিয়ে তৈরি অস্থায়ী সেতুর উপর নির্ভরশীল ছিলেন। বিশেষত মকর সংক্রান্তির সময় মকর স্নান সেরে জয়দেব কেন্দুলী মেলায় যাওয়ার ক্ষেত্রে এই অস্থায়ী সেতুই ছিল প্রধান ভরসা। তবে বর্ষার সময় সেই সেতু ভেসে যাওয়ায় প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হতো সাধারণ মানুষকে।
দুই জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যার কথা মাথায় রেখে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অজয় নদে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। প্রায় ছ’মাস আগে ভার্চুয়ালি ওই সেতুর উদ্বোধন করেন তিনি। নতুন সেতু চালু হওয়ায় দুই জেলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন মজবুত হয়েছে, তেমনই ব্যবসা-বাণিজ্যেও গতি এসেছে।
তবে সামনে মকর সংক্রান্তি উৎসব। প্রতিবছরের মতো এ বছরও অজয় নদে মকর স্নান সেরে বহু পূণ্যার্থী জয়দেব কেন্দুলী মেলায় যোগ দেবেন। নতুন স্থায়ী সেতু ব্যবহার করতে হলে পূণ্যার্থীদের তুলনামূলকভাবে অনেকটা দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হচ্ছে। সেই কারণেই এলাকার মানুষের দাবি, মেলা উপলক্ষে পুরনো বালি-মাটি দিয়ে তৈরি অস্থায়ী সেতুটি পুনরায় নির্মাণ করা হোক।
এই দাবিকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গলসীর বিধায়ক নেপাল ঘড়ুই এবং কাঁকসা ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে অজয় নদটি পুরোপুরি বীরভূম জেলার মধ্যে পড়ায় এবং বীরভূম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অস্থায়ী সেতু নির্মাণে অনাগ্রহ প্রকাশ করায় বিষয়টি প্রশাসনিক জটিলতায় আটকে যায়।
এই পরিস্থিতিতে সোমবার দুপুরে কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির সভাকক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, কাঁকসার বিডিও সৌরভ গুপ্তা, দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার চেয়ারম্যান সুভাষ মণ্ডল, বিদবিহার গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরা, কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ নবকুমার সামন্ত, কাঁকসা থানার আইসি প্রসূন খাঁ, কাঁকসা ট্রাফিক গার্ডের এসিপি রাজকুমার মালাকার, ওসি অনুপ কুমার হাটি সহ অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকরা।
বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “জয়দেব কেন্দুলী মেলার সঙ্গে কাঁকসা এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলার মানুষের আবেগ গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মানুষ অস্থায়ী সেতু ব্যবহার করেই মকর স্নান ও মেলায় যাতায়াত করেছেন। নতুন সেতু দিয়ে গেলে দূরত্ব অনেকটাই বেড়ে যাচ্ছে। মকর সংক্রান্তির দিনে পূণ্যার্থীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেই কারণেই অস্থায়ী সেতু পুনর্নির্মাণের দাবি উঠেছে।”
তিনি আরও জানান, কাঁকসা ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি ইতিমধ্যেই খতিয়ে দেখা হয়েছে এবং কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। খুব শীঘ্রই বীরভূম জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বীরভূম জেলা প্রশাসন অনুমতি দিলে পূণ্যার্থী ও এলাকাবাসীর সুবিধার্থে কাঁকসা ব্লক প্রশাসন অস্থায়ী সেতু নির্মাণের কাজ করবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।


